রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
তুরাগের বউবাজারে ফুডকোর্ট মার্কেট উচ্ছেদের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত  ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ কর্তৃক ছয়টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার; ভাসানী ফাউন্ডেশন নিউইয়র্কের আলোচনা সভায় বক্তারা মওলানা ছিলেন রাজনীতিকদের আইকনিক নেতা  তিন শূন্যের ধারণার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবী গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার তুরাগের বউবাজার মার্কেট উচেছদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ট্রাম্পের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ মিটিয়ে ফেলতে পারবেন ড. ইউনূস সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে’ সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে  প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্স’র কার্যকরি কমিটি (২০২৪-২০২৬)গঠন ১০ নভেম্বর ২০২৪ শহীদ নুর হোসেন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান রাজধানী,তুরাগে ছেলের হাতে মা খুন

নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর ট্র্যাজেডির ১ বছর

নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর ট্র্যাজেডির ১ বছর

 

সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা প্রতিনিধি :// দৈনিক ঢাকার কন্ঠ নিউজ

নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিত ট্রাজেডির ১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও থামেনি স্বজনহারাদের আহাজারি।

 

আজোও চোখ খুললেই দেখা যায় চোখের সামনে ভেসে উঠা উচিত পুরে নৌকাডুবিতে নিহতদের লাশের সারি।

 

২০২০ সালের ৫ আগস্ট। এই দিন সকালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা শফিকুল ইসলামের আমন্ত্রণে ময়মনসিংহ থেকে বেড়াতে আসেন মারকাজুল সুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম মাহফুজুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির ২০-২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এর পর তারা প্রায় ৫০ জন মিলে হাওর ভ্রমণের উদ্দেশে মদন উপজেলার উচিতপুর নৌঘাটে যান। পরে সেখান থেকে একটি নৌকা (ট্রলার) ভাড়া করে দুপুর ১২টার দিকে উচিতপুর হাওর ভ্রমণে বের হন।

 

এ সময় নৌকাটি ওই হাওরের রাজালীকান্দা নামক এলাকায় পৌঁছালে ঝোড়ো বাতাস এবং প্রবল ঢেউয়ের কবলে পড়লে নৌকাটি তাতক্ষনিক ডুবে যায়। এ অবস্থায় নৌকায় থাকা ৩০ জন সাঁতরে জীবন বাঁচালেও মারা যান মাওলানা মাহফুজুর রহমান ও তার পরিবারের ৮ জনসহ ১৮ জন।

 

৫ আগস্ট উচিতপুরে নৌকাডুবি ট্র্যাজেডির এক বছর আজ।

 

মর্মান্তিক এ নৌকাডুবির ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আজও থামেনি স্বজনহারাদের আহাজারি।

 

 

নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাতিজা জামাই মতিউর রহমান জানান, গত বছরের এই দিনে হাওর ভ্রমণে গিয়ে ময়মনসিংহ সদরের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুল সুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম মাহফুজুর রহমান, তার দুই পুত্র আসিফ (১৫) ও মাহবুব (১২), ভাগনে রেজাউল (১৫), ভাতিজা জোবায়ের (২০) ও জোনায়েদ (১৭), ভাতিজি লুবনা (১৩) ও জুলফাসহ (৭) একই পরিবারের ৮ জন নৌকাডুবিতে মারা যান। ঘটনার এক বছর কেটে গেলেও আমরা সে শোক আজও ভুলতে পারছি না।

 

এদিকে ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসেন এবং জেলা প্রশাসক মদন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদকে প্রধান করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন দেন। তদন্ত কমিটি নৌকাডুবির কারণ হিসেবে ঝোড়ো বাতাস ও ঢেউকে দায়ী করে ওই বছরের ১৯ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদনও দাখিল করে।

 

প্রতিবেদনে উচিতপুর এলাকায় নৌদুর্ঘটনা রোধে নৌযানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা, নৌযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস পরীক্ষা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ করা, চালকদের প্রশিক্ষণ, ডুবরি ইউনিট গঠন ও পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনসহ কিছু সুপারিশও করা হয়। 

 

এছাড়া নৌকাডুবির পর ‘ভাই ভাই পরিবহন’ নামক ট্রলারটির মালিক লাহুত মিয়া, চালক আল আমিন ও কামরুল ইসলামকে আসামি করে ঢাকার নৌ আদালতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়। পরে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় মদন থানা পুলিশ।

 

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট ) উচিতপুর নৌঘাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধ থাকলেও প্রতিদিনই হাওর ভ্রমণে আসছেন স্থানীয়সহ দূর-দূরান্তের শত শত পর্যটক। আর এ সুযোগে অতীতের মতো এবারও যাত্রী পরিবহনের প্রতিযোগিতায় নেমে গেছেন ট্রলারমালিক ও চালকরা।

 

ঘাটে স্থানীয় প্রশাসন কিছুটা নজড়দারি বাড়ালেও ট্রলারমালিক, চালক ও যাত্রীরা কোনো বিধিনিষেধই মানছেন না। প্রতিটি নৌকায় লাইফ জ্যাকেট, বয়াসহ জীবনরক্ষার সরঞ্জামাদি রাখার শর্ত দেওয়া হলেও তা করছে না কেউই। পরিবহন করা হচ্ছে ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী। চালানো হচ্ছে ফিটনেসবিহীন নৌকাও।

অনেক ছোট এবং পুরোনো নৌকায়ও ইঞ্জিন স্থাপন করে বানানো হচ্ছে ট্রলার। আর এসব ট্রলাররের চালক হচ্ছে শিশু-কিশোররা। ফলে আবারও দেখা দিয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এদিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশে দমকলবাহিনীর ডুবুরি ইউনিট রাখার প্রস্তাব করা হলেও এখন পর্যন্ত ডুবুরি দল পাঠানো হয়নি সেখানে। ট্রলার ঘাটে পুলিশ ক্যাম্প থাকার কথা থাকলেও তাও হয়নি।

 

বাবুল মিয়া নামে একজন নৌকার মাঝির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই নৌকার ওপরই আমাদের সংসার চলে। তাই নৌকা নিয়ে প্রতিদিনই ঘাটে বসে থাকতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবার মানুষ কম।

 

নৌকায় লাইফ জ্যাকেট, বয়া ও জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসবের অনেক দাম। টাকা কে দেবে। তাছাড়া আমাদের এসবের দরকারও হয় না।

 

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মিয়া জানান, গত বছর এত মানুষ নৌকা ডুবে মারা গেল। তবুও লোকজনের হুঁশ হয়নি। এ বছরও সেই আগের মতোই নৌকা চলছে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে ভাঙাচোরা নৌকাগুলোতে। কে দেখবে এসব। দেখার যেন কেউ নেই।

 

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ এই প্রতিনিধিকে জানান, বর্ষা শুরুতেই আমরা জেলা প্রশাাসকের উপস্থিতিতে নৌকার মালিক, চালক ও ইজারাদারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। নৌকা চালকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে এবং চালকদের মধ্যে লাইফ জ্যাকেট ও বয়া বিতরণ করেছি।

 

সোহেল খান দূর্জয়

নেত্রকোনা প্রতিনিধি 

০৫.০৮.২০২১

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com